২০১৭ সালে আমরা ইংল্যান্ড বেড়াতে গেছিলাম। সেটা একটা বেশ লম্বা ট্যুর। তারমধ্যে আত্মীয়স্বজনের বাড়িও ছিল। সেবারই আমরা দেখতে যাই ইয়র্কশায়ারে উইলিয়াম শেক্সপীয়রের জন্মস্থান স্ট্র্যাটফোর্ড অন অ্যাভন। সেটা ছিল একটা বৃষ্টির দিন। ইংল্যান্ডে বৃষ্টি কিন্তু আমাদের এখানকার মতো একপশলা হয়ে গিয়ে আবার চারিদিক ঝলমলে হয়ে গেল তেমনটা সাধারণত হয় না। অনেকটা বর্ষার মতো ঘ্যানঘেনে বৃষ্টি। তারমধ্যেই গিয়ে পৌঁছালাম স্ট্র্যাটফোর্ড অন অ্যাভনে। খুব সুন্দর সাজানো-গোছানে একটা ছোট্ট শহর। শুনলাম এখানে জমি-বাড়ির দাম নাকি সাংঘাতিক বেশি। মানে খুব বড়লোক ছাড়া কারও পক্ষে শেক্সপীয়রের ভিটেবাড়ির কাছাকাছি থাকা সম্ভব নয়। বাড়ির ভিতরে খুব সুন্দর করে তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র সাজানো। তবে সেখানে ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে মানা। বাইরে একটা ছোট্ট সুভ্যেনিৎ শপ আছে সেখানে আরও অনেক কিছুর সঙ্গে বাড়ির ভিতরের জিনিসপত্রের রেপ্লিকাও বিক্রি হয়। শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে দেখলাম শেক্সপীয়রের প্রিয় সরাইখানা উইন্ড মিল। শেক্সপীয়রের নাটক যাঁরা করতেন সেই রয়্যাল শেক্সপীয়র কোম্পানির নাট্যশালাটিও রয়েছে এখানে। তাঁর বাড়ি থেকে একটু দূরে হোলি ট্রিনিটি চার্চ। সেখানেই তাঁর স্ত্রী অ্যান হ্যাথওয়ে্র সঙ্গে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন মহাকবি। অ্যান হ্যাথওয়ের খড়ের চালা দেওয়া বাড়িটিও দেখা হল। তারপর স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজন সেরে ফিরলাম আমরা। সম্পত্তির দাম খুব বেশি হলেও খাবারের দাম কিন্তু অস্বাভাবিক বেশি কিছু ছিল না। শেক্সপীয়রের নাটকের সঙ্গে পরিচয় স্কুলে পড়ার সময়েই। কিন্তু তাঁর লেখার গভীরতা, চিন্তার ব্যাপ্তি, বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি এসবই বুঝলাম যখন স্নাতকোত্তর স্তরে আবার তাঁর নাটক পড়তে হল। এমন একজন মানুষ যেখানে থাকতেন, যে রাস্তাঘাট তাঁর স্পর্শে ধন্য হয়েছে সেখানে আসতে পারা ছিল সুদূরের কল্পনা। স্বপ্নপূরণের ঘোর কাটতে তাই সেদিন সময় লেগেছিল অনেক।