সাউন্ড অফ মিউজিক ছবিটা আমি দেখি কলেজে পড়ার সময় এবং দেখার পরই ঠিক করেছিলাম জীবনে যদি কখনও বিদেশ যাওয়ার সুযোগ হয় তাহলে অস্ট্রিয়া যাব। ঘুরে দেখে আসব ক্যাপ্টেন আর মারিয়ার বাড়ি-ঘর-দোর। সে সৌভাগ্য অবশেষে হল ২০১৪ সালের হেমন্তে। বইয়ে পড়েছিলাম ইউরোপে ফল্ নাকি ভারি সুন্দর। কিন্তু সে যে এমন দিকে দিকে রঙের হোরিখেলা তার কোনও ধারণা ছিল। গাছে গাছে যেন লাল-হলুদ-সোনালির আগুন লেগেছে। অস্ট্রিয়ায় আমাদের প্রথম গন্তব্যই ছিল সলসবুর্গ। সেখান থেকেই হবে সাউন্ড অফ মিউজিক ট্যুর। অবশেষে ঝলমলে এক রোদালো সকালে ঘুরে দেখলাম ক্যাপ্টেন ফন ট্র্যাপের বাড়ি। বাড়ির সামনে সেই বিশাল লেক যেখানে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে নৌকা উল্টে গেছিল। লেকের কালো জলে ভেসে বেড়াচ্ছে রাজহাঁসের দল। জানা গেল যে রাস্তায় মারিয়া কনফিডেন্স গানটি গেয়েছিল সেটি মোটেই বাড়ির সামনের রাস্তা নয়, সেই রাস্তাটি রয়েছে আর্চ ডিউকের বাড়ির সামনে। আর সেই আর্চ ডিউকের বাড়ির বাগানেই আছে গাজিবো মানে সেই কাচের ঘর, যার ভিতরে বৃষ্টির রাতে, আই অ্যাম সিক্সটিন গাওয়া হচ্ছে। সিনেমায় অবশ্য সবটাই ক্যাপ্টেনের বাড়ির বাগান দেখানো হয়েছে। যে চার্চে ক্যাপ্টেন আর মারিয়ার বিয়ে হয়েছিল সেটি অপূর্ব সুন্দর। তার সামনে আবার এডেলওয়াইশ ফুলের নানারকম রেপ্লিকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও দেখা হল মিরাবেল প্যালেস। সেটি অবশ্য ক্যাপ্টেনের বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে, শহরের মধ্যে। প্রতিটি জায়গাই ছবির দৃশ্যের সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়ে দেখাটা খুবই উপভোগ করেছিলাম। তবে ট্যুর অপারেটর মহিলার সৌজন্যে দুটি মজার জিনিস জানা গেছিল। প্রথমত অস্ট্রিয়ার মানুষরা হলিউডে তৈরি সাউন্ড অফ মিউজিক ছবিটিকে মোটেই পছন্দ করে না। তাদের নিজের দেশে একই নামে যে ছবি তৈরি হয়েছে সেটাই তাদের পছন্দ যদিও তার গল্পটা অনেকটাই অন্যরকম। তবে সে ছবি আমি দেখিনি। আর দ্বিতীয়ত হলিউডের সাউন্ড অফ মিউজিক ছবির শেষে দেখানো হয়েছে ক্যাপ্টেন ফন ট্র্যাপ নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে সবাইকে নিয়ে সুইৎজারল্যান্ড পালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যে পাহাড় আমরা তাঁদের পেরোতে দেখি বাস্তবে সেই পাহাড়ের উল্টোদিকে আসলে জার্মানির বাভেরিয়া অঞ্চল। মানে বাস্তবে সেই পাহাড় ডিঙোলে তাদের আবার নাৎসিদের খপ্পরেই পড়ার কথা।

Click on an image to Zoom